
মোঃ শাহজাহান বাশার, স্টাফ রিপোর্টার: ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ বাতিলের দাবিতে আজ মঙ্গলবার (২৭ মে) সকাল থেকেই রাজধানীর সচিবালয় চত্বরে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সরকারের নীতির প্রতিবাদে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের শত শত কর্মকর্তা-কর্মচারী বিক্ষোভে ফেটে পড়েছেন। তাদের টানা কর্মসূচি সচিবালয়ের নিরাপত্তাব্যবস্থায় ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে।
আজ সকাল থেকে সচিবালয়ের প্রধান ফটকে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। প্রবেশপথে অবস্থান নিয়েছে পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট সোয়াট এবং বাহিরে মোতায়েন করা হয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। সচিবালয় এলাকায় সাধারণ মানুষের প্রবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে এবং শুধুমাত্র পরিচয়পত্রধারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরই ভিতরে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নতুন ভবনের নিচে শত শত কর্মচারী সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন। তারা দাবি তুলেছেন—তথাকথিত ‘সংশোধন’ নামের আড়ালে সরকারি চাকরিজীবীদের অধিকার সংকুচিত করার চেষ্টা বন্ধ করতে হবে।
এর আগে গতকাল সোমবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে একটি বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, মঙ্গলবার সচিবালয়ে কোনো দর্শনার্থী প্রবেশ করতে পারবে না। সচিবালয়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
আজ বেলা ১২টার দিকে সচিবালয়ে কর্মরত সাংবাদিকদের প্রবেশের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা। এদিকে কর্মচারীদের একাংশের দাবি, মিডিয়াকে সচিবালয় থেকে দূরে রাখা হচ্ছে যেন তাদের প্রতিবাদের চিত্র সাধারণ জনগণের দৃষ্টিগোচর না হয়।
বিক্ষোভরত কর্মচারীদের পক্ষে ‘বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য ফোরাম’ নামে একটি প্ল্যাটফর্ম গঠন করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। গত তিন দিন ধরে একটানা কর্মসূচি পালন করছেন তারা এবং আজকের বিক্ষোভের মধ্য দিয়ে তা আরও বেগবান হয়েছে।
এ ফোরামের নেতারা জানিয়েছেন, সংশোধিত অধ্যাদেশে চাকরিজীবীদের চাকরিচ্যুতির বিষয়টি সহজতর করা হয়েছে, যা চাকরির নিরাপত্তার পরিপন্থী। এক কর্মকর্তা বলেন, “যে কোনো অভিযোগে তদন্ত ছাড়াই চাকরি থেকে বরখাস্ত করার মতো ক্ষমতা দিয়ে এই অধ্যাদেশ আমাদের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে।”
ফোরামের নেতারা সারাদেশের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সরকারি দপ্তরে কর্মরত সহকর্মীদের এই কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তারা বলছেন, “এটি শুধু সচিবালয়ের নয়, গোটা সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই।”
চলমান আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সচিবালয় এখন রূপ নিয়েছে একটি নিরাপত্তা বলয়ে ঘেরা বিক্ষোভস্থলে। পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেয়, তা নির্ভর করছে সরকারের অবস্থান ও সংলাপের উপর। তবে আন্দোলনকারীদের দৃঢ় মনোভাব স্পষ্ট—‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত তারা মাঠ ছাড়ছেন না।