১০:০৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৩ জুন ২০২৫, ২০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

দুদকের নিষেধাজ্ঞার মুখে উপদেষ্টার সাবেক এপিএস মোয়াজ্জেম: এনআইডি ব্লকসহ দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৯:৪৯:৪০ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৪ মে ২০২৫
  • ১০০৪ Time View

মোঃ শাহজাহান বাশার,স্টাফ রিপোর্টার:

দেশব্যাপী আলোচিত দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছেন স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার সাবেক এপিএস মোয়াজ্জেম হোসেন। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তার বিরুদ্ধে শত কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগের ভিত্তিতে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা ও জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) ব্লক করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।

শনিবার (২৪ মে) দুদকের নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তিনি উপদেষ্টার এপিএস হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে ক্ষমতার অপব্যবহার করে তদবির বাণিজ্য, টেন্ডার অনিয়ম, এবং প্রতিশ্রুতি বাণিজ্যের মাধ্যমে শত কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ গড়েছেন। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে দুদক তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং প্রাথমিক অনুসন্ধানের পরই তার বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নেয়।

সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার (২২ মে) সকাল ১১টা ৩০ মিনিট থেকে দুপুর ১২টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত দুদকের উপসহকারী পরিচালক মিনু আক্তার সুমির নেতৃত্বে একটি দল রাজধানীর প্রধান কার্যালয়ে মোয়াজ্জেম হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। এরপরই তাকে পুনরায় ডাকার সম্ভাবনা এবং সম্পদের উৎস ও বৈধতা যাচাইয়ের জন্য বিদেশ যাত্রা নিষিদ্ধ করা হয়।

দুদকের অনুসন্ধান দল নিশ্চিত করেছে যে, মোয়াজ্জেম হোসেন যাতে বিদেশে পাড়ি জমাতে না পারেন, সেজন্য তার এনআইডি নম্বর ব্লক করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যা প্রয়োজনে ইমিগ্রেশন ও ব্যাংকিং তথ্যের সঙ্গে সমন্বয় করে প্রয়োগ করা হবে।

দুদকের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, “সাধারণভাবে উচ্চপদস্থ রাজনৈতিক ব্যক্তিদের ঘনিষ্ঠদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ পেলে বিষয়টি অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে দেখা হয়। এই ক্ষেত্রে অভিযোগের ধরন ও উপস্থাপিত তথ্যপত্র গুরুত্বের দাবি রাখে। মোয়াজ্জেম হোসেনের সম্পদের হিসাব ও আয়বহির্ভূত অর্থের উৎস যাচাই ছাড়া তাকে ছেড়ে দেওয়ার সুযোগ নেই।”

জিজ্ঞাসাবাদ শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের সামনে মুখ খুলে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করেন মোয়াজ্জেম হোসেন। তিনি বলেন, “আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলো আনা হয়েছে তা একেবারেই ভিত্তিহীন। একটি পক্ষ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমাকে হেয় করতে এসব অপপ্রচার চালাচ্ছে।”

তিনি আরও দাবি করেন, “দুদকের চিঠি পেয়ে আমি স্বেচ্ছায় হাজির হয়েছি। আমি ২৫ মার্চ বিসিএস ভাইভার প্রস্তুতির জন্য পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছিলাম। এরপর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আমাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। দুর্নীতির অভিযোগ এসেছে আমার পদত্যাগের পর, এর সঙ্গে আমার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।”

মোয়াজ্জেমের দাবি অনুযায়ী, কিছু ‘ছাত্রঘনিষ্ঠ মহল’ তাকে টার্গেট করে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ষড়যন্ত্র করছে। যদিও দুদক বলছে, অভিযোগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আর্থিক তথ্য, ব্যাংক হিসাব এবং কয়েকটি ভুয়া কোম্পানির লেনদেন নথিভুক্তভাবে তদন্তাধীন রয়েছে।

উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, স্থানীয় সরকার উপদেষ্টার সরাসরি সাবেক এপিএস হিসেবে মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে এমন গুরুতর অভিযোগ প্রশাসনিক মহলে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। অনেকেই মনে করছেন, এই তদন্ত ও ব্যবস্থা আদতে সরকারের দুর্নীতিবিরোধী অবস্থানকেই শক্তিশালী করছে। অপরদিকে কেউ কেউ এটিকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে কোণঠাসা করার কৌশল বলেও আখ্যা দিচ্ছেন।

বর্তমানে দেশব্যাপী দুর্নীতিবিরোধী অভিযান ও প্রশাসনিক স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে গিয়ে অনেক চাঞ্চল্যকর ঘটনা প্রকাশ পাচ্ছে। সাবেক এপিএস মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে দুদকের এই পদক্ষেপ যথার্থভাবে প্রমাণ করে, আইন সবার জন্য সমান এবং যেকোনো ব্যক্তি বা পদস্থ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া এখন সময়ের দাবি

সম্পাদক : আলেমা আফরোজা খাতুন
বার্তা সম্পাদক ও প্রকাশক : মোছাঃ সমাপ্তি আক্তার

যোগাযোগ: ভূরুঙ্গামারী , কুড়িগ্রাম
মোবাইল: 01719-417006 / 01714-625816

© 2025 দৈনিক বাংলার জনপদ। সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।

About Author Information

দিনাজপুরে বিভিন্ন আয়োজনে বিশ্ব দুগ্ধ দিবস পালিত

দুদকের নিষেধাজ্ঞার মুখে উপদেষ্টার সাবেক এপিএস মোয়াজ্জেম: এনআইডি ব্লকসহ দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

Update Time : ০৯:৪৯:৪০ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৪ মে ২০২৫

মোঃ শাহজাহান বাশার,স্টাফ রিপোর্টার:

দেশব্যাপী আলোচিত দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছেন স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার সাবেক এপিএস মোয়াজ্জেম হোসেন। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তার বিরুদ্ধে শত কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগের ভিত্তিতে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা ও জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) ব্লক করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।

শনিবার (২৪ মে) দুদকের নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তিনি উপদেষ্টার এপিএস হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে ক্ষমতার অপব্যবহার করে তদবির বাণিজ্য, টেন্ডার অনিয়ম, এবং প্রতিশ্রুতি বাণিজ্যের মাধ্যমে শত কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ গড়েছেন। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে দুদক তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং প্রাথমিক অনুসন্ধানের পরই তার বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নেয়।

সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার (২২ মে) সকাল ১১টা ৩০ মিনিট থেকে দুপুর ১২টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত দুদকের উপসহকারী পরিচালক মিনু আক্তার সুমির নেতৃত্বে একটি দল রাজধানীর প্রধান কার্যালয়ে মোয়াজ্জেম হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। এরপরই তাকে পুনরায় ডাকার সম্ভাবনা এবং সম্পদের উৎস ও বৈধতা যাচাইয়ের জন্য বিদেশ যাত্রা নিষিদ্ধ করা হয়।

দুদকের অনুসন্ধান দল নিশ্চিত করেছে যে, মোয়াজ্জেম হোসেন যাতে বিদেশে পাড়ি জমাতে না পারেন, সেজন্য তার এনআইডি নম্বর ব্লক করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যা প্রয়োজনে ইমিগ্রেশন ও ব্যাংকিং তথ্যের সঙ্গে সমন্বয় করে প্রয়োগ করা হবে।

দুদকের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, “সাধারণভাবে উচ্চপদস্থ রাজনৈতিক ব্যক্তিদের ঘনিষ্ঠদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ পেলে বিষয়টি অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে দেখা হয়। এই ক্ষেত্রে অভিযোগের ধরন ও উপস্থাপিত তথ্যপত্র গুরুত্বের দাবি রাখে। মোয়াজ্জেম হোসেনের সম্পদের হিসাব ও আয়বহির্ভূত অর্থের উৎস যাচাই ছাড়া তাকে ছেড়ে দেওয়ার সুযোগ নেই।”

জিজ্ঞাসাবাদ শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের সামনে মুখ খুলে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করেন মোয়াজ্জেম হোসেন। তিনি বলেন, “আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলো আনা হয়েছে তা একেবারেই ভিত্তিহীন। একটি পক্ষ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমাকে হেয় করতে এসব অপপ্রচার চালাচ্ছে।”

তিনি আরও দাবি করেন, “দুদকের চিঠি পেয়ে আমি স্বেচ্ছায় হাজির হয়েছি। আমি ২৫ মার্চ বিসিএস ভাইভার প্রস্তুতির জন্য পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছিলাম। এরপর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আমাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। দুর্নীতির অভিযোগ এসেছে আমার পদত্যাগের পর, এর সঙ্গে আমার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।”

মোয়াজ্জেমের দাবি অনুযায়ী, কিছু ‘ছাত্রঘনিষ্ঠ মহল’ তাকে টার্গেট করে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ষড়যন্ত্র করছে। যদিও দুদক বলছে, অভিযোগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আর্থিক তথ্য, ব্যাংক হিসাব এবং কয়েকটি ভুয়া কোম্পানির লেনদেন নথিভুক্তভাবে তদন্তাধীন রয়েছে।

উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, স্থানীয় সরকার উপদেষ্টার সরাসরি সাবেক এপিএস হিসেবে মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে এমন গুরুতর অভিযোগ প্রশাসনিক মহলে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। অনেকেই মনে করছেন, এই তদন্ত ও ব্যবস্থা আদতে সরকারের দুর্নীতিবিরোধী অবস্থানকেই শক্তিশালী করছে। অপরদিকে কেউ কেউ এটিকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে কোণঠাসা করার কৌশল বলেও আখ্যা দিচ্ছেন।

বর্তমানে দেশব্যাপী দুর্নীতিবিরোধী অভিযান ও প্রশাসনিক স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে গিয়ে অনেক চাঞ্চল্যকর ঘটনা প্রকাশ পাচ্ছে। সাবেক এপিএস মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে দুদকের এই পদক্ষেপ যথার্থভাবে প্রমাণ করে, আইন সবার জন্য সমান এবং যেকোনো ব্যক্তি বা পদস্থ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া এখন সময়ের দাবি